নিষিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, সকল অপরাধের বিচারেরও পথ খুলছে
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে, বলেন আইন উপদেষ্টা।অভ্যুত্থানের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।সেই সঙ্গে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলন দমানোর অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে।শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।বিচার না হওয়া পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে ‘সাইবার স্পেসসহ’ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভার পর শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভার পর শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরার কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।আর শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন দিন পর ক্ষমতায় আসা মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।টানা দুই দিন ধরে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের মধ্যে শনিবার রাতে ডাকা উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি এ সভায় জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানান আইন উপদেষ্টা।উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে দেওয়া বিবৃতি আসিফ নজরুল বৈঠক শেষে বিফ্রিংয়ে পড়ে শোনান।তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন পেয়েছে।সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।বিবৃবিতে বলা হয়, ”উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ”তৃতীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করা হবে।গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের খবরে শনিবার রাতে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে উল্লাস করেন আন্দোলনকারীরা।গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের খবরে শনিবার রাতে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে উল্লাস করেন আন্দোলনকারীরা।উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবর আসা মাত্র শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।অনেকেই স্লোগান দেন, ‘এ মূহুর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’।সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রথমে বৃহস্পতিবার রাতভর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এবং পরদিন থেকে শাহবাগে টানা দুই দিন অবরোধের মধ্যে এদিন উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়।রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়, যা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোহাম্মদ সুফিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী।আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে তাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।সেখান থেকে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। পরে তারা সেদিন বিকাল থেকেই টানা অবস্থান করছেন শাহবাগে। শনিবার বিকালে সেখানে জনজমায়েত থেকে আবারও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।শুক্রবার বিকাল থেকে শাহবাগে অবস্থানের কারণে রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।শনিবার রাজধানীর শনির আখড়া, শ্যামলীর শিশু মেলার সামনে একই দাবিতে অবরোধ হয়েছে। আরও পড়ুন :আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে ১ ঘণ্টা সময় দিলেন হাসনাত যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী: হাসনাত আবদুল্লাহ রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সরকারের বিবেচনায়: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তারেক রহমান ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন হবে: আইন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা