“এমপি কমলের ক্যাডার নুরুল আকতার হোসেন: রাজনৈতিক প্রভাব, সন্ত্রাসী বাহিনী এবং অপরাধ সাম্রাজ্য”

কক্সবাজার সদর উপজেলার লিংক রোড এলাকায় এক ভয়ঙ্কর সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন সাবেক এমপি কামলের ঘনিষ্ঠ সহকারী নুরুল আকতার হোসেন। অস্ত্র মজুদ, জমি দখল, ঘুষের মাধ্যমে পুলিশ ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ, এবং গোপনে রাজনৈতিক সহায়তা—এগুলি শুধু তার ক্ষমতার অঙ্গীকার নয়, বরং এলাকার সাধারণ জনগণের জন্য এক বিভীষিকার মতো হয়ে উঠেছে। কক্সবাজারের দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার বাসিন্দা মোজাহের আহমেদের ছেলে নুরুল আকতার হোসেন বর্তমানে লিংক রোডে বসবাস করছেন। তার ক্ষমতা ও অপরাধ সাম্রাজ্য আজ ‘আক্তার কোম্পানি’ নামে পরিচিত, যা মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।অস্ত্রধারী বাহিনী ‘আক্তার কোম্পানি’: সন্ত্রাসের রাজত্ব নুরুল আকতার হোসেন নিজেই অস্ত্রধারী বাহিনী গঠন করেছেন, যা স্থানীয় জনগণের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এই বাহিনী, যার নাম ‘আক্তার কোম্পানি’, এলাকা দখল এবং ব্যবসায়ীদের উপর চাঁদাবাজি করছে। এমনকি পুলিশকেও ঘুষ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যাতে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া না যায়। একটি স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, “আমরা পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারেনি তারা। কারণ, উনি (নুরুল আকতার) পুলিশকে ঘুষ দিয়ে নিজ হাতে রেখেছেন।” চালের আড়তে অস্ত্র মজুদ: গোপন কার্যক্রমের আলামত নুরুল আকতার হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষ আড়তের মধ্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র মজুদ ছিল, যা তার বাহিনী ‘আক্তার কোম্পানি’র জন্য। চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর অত্যাচার করতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হত। এক স্থানীয় সূত্র জানায়, “চালের আড়তেই অস্ত্র রাখা হত। তারা সেখানে বৈঠক করে নানা অপকর্মের পরিকল্পনা করত।”রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র: গোপনে আওয়ামী লীগকে অর্থ সহায়তা শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, যখন আওয়ামী লীগ সংগঠনের অভাব অনুভব করছিল, নুরুল আকতার হোসেন গোপনে তাদের অর্থ সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেন। জানা গেছে, এই সহায়তার মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন। একাধিক সূত্র দাবি করছে, তার অর্থের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের চেষ্টা ছিল। “তিনি রাজনৈতিকভাবে তার প্রভাব বজায় রাখতে এমন কাজ করতেন, যাতে বিরোধী দলগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।”

 

নিজ ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ: মানবিকতার লঙ্ঘন সবচেয়ে শোচনীয় ব্যাপার হলো, নুরুল আকতার হোসেন নিজ ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। এক সময় ভাইয়ের শরীরের অবস্থা গুরুতর হলে, সে সাহায্য দিতে চাইলেও নুরুল আকতার হোসেন তা ফিরিয়ে দেন। এমনকি ভাইয়ের জমি জালিয়াতি করে নিজের নামে লিখে নেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “একজন মানুষের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না, যিনি নিজের ভাইকেও সাহায্য করতে পারেননি।”পুলিশ ও প্রশাসনের নীরবতা এলাকার পুলিশ ও প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে নুরুল আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি পুলিশকে ঘুষ দিয়ে তার প্রভাব বজায় রেখেছিলেন, যাতে তার কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি না হয়। এক সাবেক থানা কর্মকর্তা জানান, “নুরুল আকতার হোসেনের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, পুলিশ কিছু করতে পারত না। আমরা জানতাম, কিন্তু আমাদের ওপর চাপ ছিল।”সাংবাদিকদের প্রতি হুমকি: তথ্য সংগ্রহে বাধা নুরুল আকতার হোসেন শুধুমাত্র পুলিশ ও প্রশাসনকেই নিয়ন্ত্রণ করেননি, বরং সাংবাদিকদের কাজেও বাধা সৃষ্টি করেছেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নানা ধরনের হুমকির মুখে পড়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি, “আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে বা তার সহযোগীদের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছি। তারা আমাদের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য ভয় দেখায় এবং কোনো কিছু জানালে বিপদে পড়ার শঙ্কা দেয়।” এমনকি সাংবাদিকদের শারীরিক আক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে।অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত: জনগণের ক্ষোভ এখনও কক্সবাজারের সাধারণ জনগণ সন্ত্রাসী বাহিনী এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। নুরুল আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা জানি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না, কারণ সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আমরা আর চুপ থাকতে পারব না। আমাদের বিচার চাই।”কক্সবাজারের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নুরুল আকতার হোসেনের শাসন ও তার অপরাধ জগতের শিকার হয়ে আসছে। প্রশাসন এবং পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি, সাংবাদিকদের কাজেও বাধা প্রদান, হুমকি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। জনগণের ন্যায়বিচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সাম্রাজ্যের অবসান ঘটানো এবং জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।