বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
 দৈনিক বাংলাদেশ

স্বাভাবিক রূপে ফিরছে সমুদ্রসৈকত, পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি


আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ
আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫০ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ |

স্বাভাবিক রূপে ফিরছে সমুদ্রসৈকত, পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি
দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়ি
* দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়ি
* ১২০টির বেশি দোকানপাট উচ্ছেদ
* অভিযানে বাঁধা দেওয়ায় এক যুবক আটক
* পুরোনো স্থাপনাগুলো ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরাতে কড়া নির্দেশ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগান দখল করে গড়ে তোলা ১২০টির বেশি অবৈধ দোকানপাট (চার চাকার টংঘর) উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার (১২ অক্টোবর) বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েক শ সদস্য অংশ নেন। অভিযানে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে হৃদয় নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তবে সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে আগেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। 

সকালে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১১টার পর থেকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা অবৈধ দোকানপাট সরানোর চেষ্টা চালান। তবে দোকানমালিকেরা নানা অজুহাত দিলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী মাইকিং করে বেলা দুইটা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। তিনি ঘোষণা দেন, এরপরও দোকান না সরালে যৌথ বাহিনী উচ্ছেদে নামবে। একই সময়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কার্ড থাকুক বা না থাকুক, ঝাউবাগানের ভেতর কোনো দোকান রাখা যাবে না।’

দুপুর গড়িয়ে গেলেও দোকান না সরায় খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে অবৈধ দোকান ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরে দোকানমালিকেরা ঝাউবাগানের ভেতরে রাখা দোকান সরিয়ে সৈকত সড়কের পাশে রাখতে শুরু করেন। এতে সাময়িকভাবে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশ মাইকিং করে দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানায়। বিকেল চারটার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে কয়েকটি দোকান ভাঙা শুরু হলে বাকিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।

যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম। উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, সেনাবাহিনীর মেজর আরিফ শাহরিয়ার, সদর ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদ পেয়ার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান প্রমুখ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দেড় শতাধিক চার চাকার টংঘর দোকান বসানো হয়। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় দোকানগুলো সরিয়ে দিলে পরে মসজিদের উত্তর পাশের ঝাউবাগানে নতুন করে দোকান বসানো হয়। এতে পর্যটকদের নিরাপদ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল।

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো সংঘাত ছাড়াই যৌথ বাহিনী ঝাউবাগানের ভেতর থেকে ১২০টির বেশি দোকান উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ বালিয়াড়ি বা ঝাউবাগানে অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হব।’

পুলিশ জানায়, সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়িতে আরও কয়েক শ দোকানপাট রয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে এগুলো নিজ উদ্যোগে সরানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। 

এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নতুন স্থাপনাগুলো ১১ অক্টোবর রাতের মধ্যে এবং পুরোনো স্থাপনাগুলো ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরাতে হবে। এরপর শহরজুড়ে মাইকিং করে বিষয়টি জানানো হয়। 

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রথম দিনের অভিযানে ১২০টির মতো দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলো ১৭ অক্টোবরের মধ্যে সরানো হবে। একই সঙ্গে সৈকতের ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা চাই, কোনো পর্যটক যেন সৈকতে এসে ভোগান্তিতে না পড়েন।’ 

এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা জানিয়েছেন, সৈকতের স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেলে তারা স্বস্তি অনুভব করবেন। ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ফাহিম বলেন- কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে দোকানপাটে ভরপুর, বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা-দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হলে খোলা আকাশ আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে ভালো লাগবে।

আপনার মতামত লিখুন

 দৈনিক বাংলাদেশ

প্রকাশের তারিখ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫


স্বাভাবিক রূপে ফিরছে সমুদ্রসৈকত, পর্যটকদের মাঝে স্বস্তি

প্রকাশের তারিখ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫

featured Image
* দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হচ্ছে সৈকতের বালিয়াড়ি
* ১২০টির বেশি দোকানপাট উচ্ছেদ
* অভিযানে বাঁধা দেওয়ায় এক যুবক আটক
* পুরোনো স্থাপনাগুলো ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরাতে কড়া নির্দেশ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগান দখল করে গড়ে তোলা ১২০টির বেশি অবৈধ দোকানপাট (চার চাকার টংঘর) উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার (১২ অক্টোবর) বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের কয়েক শ সদস্য অংশ নেন। অভিযানে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে হৃদয় নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তবে সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে আগেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল। 

সকালে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১১টার পর থেকে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা অবৈধ দোকানপাট সরানোর চেষ্টা চালান। তবে দোকানমালিকেরা নানা অজুহাত দিলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী মাইকিং করে বেলা দুইটা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। তিনি ঘোষণা দেন, এরপরও দোকান না সরালে যৌথ বাহিনী উচ্ছেদে নামবে। একই সময়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কার্ড থাকুক বা না থাকুক, ঝাউবাগানের ভেতর কোনো দোকান রাখা যাবে না।’

দুপুর গড়িয়ে গেলেও দোকান না সরায় খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে অবৈধ দোকান ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরে দোকানমালিকেরা ঝাউবাগানের ভেতরে রাখা দোকান সরিয়ে সৈকত সড়কের পাশে রাখতে শুরু করেন। এতে সাময়িকভাবে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশ মাইকিং করে দোকানগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে অনুরোধ জানায়। বিকেল চারটার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে কয়েকটি দোকান ভাঙা শুরু হলে বাকিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।

যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম। উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ, সেনাবাহিনীর মেজর আরিফ শাহরিয়ার, সদর ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদ পেয়ার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান প্রমুখ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দেড় শতাধিক চার চাকার টংঘর দোকান বসানো হয়। জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতায় দোকানগুলো সরিয়ে দিলে পরে মসজিদের উত্তর পাশের ঝাউবাগানে নতুন করে দোকান বসানো হয়। এতে পর্যটকদের নিরাপদ চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল।

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, ‘কোনো সংঘাত ছাড়াই যৌথ বাহিনী ঝাউবাগানের ভেতর থেকে ১২০টির বেশি দোকান উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ বালিয়াড়ি বা ঝাউবাগানে অবৈধ স্থাপনা করতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হব।’

পুলিশ জানায়, সুগন্ধা সৈকতের বালিয়াড়িতে আরও কয়েক শ দোকানপাট রয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে এগুলো নিজ উদ্যোগে সরানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। 

এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় নতুন স্থাপনাগুলো ১১ অক্টোবর রাতের মধ্যে এবং পুরোনো স্থাপনাগুলো ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সরাতে হবে। এরপর শহরজুড়ে মাইকিং করে বিষয়টি জানানো হয়। 

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রথম দিনের অভিযানে ১২০টির মতো দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবশিষ্টগুলো ১৭ অক্টোবরের মধ্যে সরানো হবে। একই সঙ্গে সৈকতের ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা চাই, কোনো পর্যটক যেন সৈকতে এসে ভোগান্তিতে না পড়েন।’ 

এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা জানিয়েছেন, সৈকতের স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেলে তারা স্বস্তি অনুভব করবেন। ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ফাহিম বলেন- কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে দোকানপাটে ভরপুর, বালিয়াড়িতে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা-দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হলে খোলা আকাশ আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে ভালো লাগবে।


 দৈনিক বাংলাদেশ

সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দু শুক্কুর নির্বাহী সম্পাদক: রকসী সিকদার পরিচালনা সম্পাদক : ইকবাল চৌধুরী বার্তা সম্পাদক : আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক বাংলাদেশ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত